অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি – Arguments for and against free trade

অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি – Arguments for and against free trade

আপনারা এই পোস্ট থেকে জানতে পারবেন অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি – Arguments for and against free trade সম্পর্কে।

এর আগের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের মূলধন হিসাব ও পরিসংখ্যানগত ভুল ত্রুটি সম্পর্কে।

অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আগের পোস্ট দেখুন।

অবাধ বানিজ্য কাকে বলে? – What is free trade?

যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানি ও রপ্তানির উপর কোনোরূপ বাধা নিষেধ আরোপনা না করা হয় তাহলে এরূপ বাণিজ্যকে অবাধ বাণিজ্য বলে।

অবাধ বাণিজ্যে পণ্য অবাধে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমনাগমন করে।

প্রত্যেক দেশ অবাধে পণ্য আমদানি করে তার চাহিদা মেটাতে পারে এবং প্রত্যেক দেশের রপ্তানি অবাধে অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারে।

( * অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি – Arguments for and against free trade )

অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে যুক্তি সমূহ – Arguments in favor of free trade

অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তি গুলো দেখানো হয়ে থাকেঃ-

(ক) আন্তর্জাতিক বিশেষায়নঃ

প্রত্যেক দেশের সম্পদ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য থাকে। সুতরাং প্রত্যেক দেশ বিভিন্ন পণ্য বিভিন্ন খরচের উৎপাদন করতে পারে।

একটি দেশ অন্য দেশের তুলনায় কম খরচে যেসব পণ্য উৎপাদন করতে পারে সেসব পণ্য উৎপাদন করা উচিত এবং এসব পণ্য বিনিময় করে যেসব পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি সেসব পণ্য আমদানি করা উচিত।

এভাবে বিশেষায়নের ফলে প্রত্যেক দেশ তার সীমিত সম্পদ থেকে বেশি পরিমাণ আয় লাভ করতে সক্ষম হয়।

(খ) অবাধ বাণিজ্য ও দক্ষতাঃ

বাণিজ্যের বাধা নিষেধ আরোপ করলে তা দক্ষতা ক্ষতি সৃষ্টি করে।

আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করলে ভোক্তাদের বেশি দাম দিয়ে পণ্যটি ভোগ করতে হয়।

আবার পণ্যটি উৎপাদনে এই দেশের তুলনামূলক অসুবিধা থাকায় এটি উৎপাদনে বিদেশের তুলনায় বেশি পরিমাণ উপকরণ ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সম্পদের অদক্ষ ব্যবহার হয়।

অবাধ বাণিজ্য এসব ক্ষতি দূর করে এবং জাতীয় কল্যান বৃদ্ধি করে।

(গ) অবাধ বাণিজ্য ও উৎপাদন খরচঃ

সংরক্ষণের ফলে শিল্পে প্রতিযোগিতা হ্রাস পায় এবং মুনাফা বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেওয়ার জন্য দেশীয় বাজার ছোট হওয়া সত্বেও অনেক ফার্ম পণ্যটি উৎপাদন করে।

ফলে অর্থনীতি বর্ধিত উৎপাদন জনিত ব্যয় সংকোচ এর সুবিধা লাভে বঞ্চিত হয়।

অবাধ বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার ফলে অদক্ষ ফার্ম শিল্প ত্যাগ করে এবং স্বল্প সংখ্যক দক্ষ ফার্ম উৎপাদনে নিয়োজিত থাকে।

উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান মাত্রা গত প্রতিদানের কারণে স্বল্প সংখ্যক দক্ষ ফার্ম অনেক পরিমান পণ্য উৎপাদন করায় উৎপাদন খরচ কম পড়ে।

(ঘ) রাজনৈতিক যুক্তিঃ

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে শুল্ক ও রপ্তানি ভর্তুকি জাতীয় কল্যাণ বৃদ্ধি করে।

কিন্তু সংরক্ষণ ও ভর্তুকি যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর তৎপরতার জন্য সরকার সেসব ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন না।

বরং বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যে সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণ বা ভর্তুকি দাবি করে সেসব ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে হয়।

ফলে অর্থনীতির কল্যাণ হ্রাস পায়। এজন্য সাধারণভাবে অবাধ বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করা উচিত যাতে কোন বিশেষ গোষ্ঠী চাপ দিয়ে সরকারের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত সুবিধা আদায় করতে না পারে।

আরো পড়ুনঃ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য – balance of transaction in international trade

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা এবং লাভ – Advantages and profit of international trade

Shall and will এর ব্যবহার

অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য কাকে বলে? সংজ্ঞা – what is International trade? Definition

অবাধ বাণিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি
অবাধ বা বানিজ্যের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি

( * অবাধ বাণিজ্যের বিপক্ষে যুক্তি – Arguments against free trade )

অবাধ বাণিজ্যের বিপক্ষে নিম্নলিখিত যুক্তিসমূহ দেখানো হয়ে থাকেঃ

(ক) বাণিজ্য শর্ত যুক্তিঃ

অবাধ বাণিজ্য নীতি অনুসরণ না করে কাম্য শুল্ক ও রপ্তানি কর আরোপ করে একটি দেশ তার বাণিজ্য শর্তের উন্নতি করতে সক্ষম হয়।

তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এ যুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ ছোট দেশসমূহ তাদের আমদানি ও রপ্তানি দাম প্রভাবিত করতে পারে না এবং ফলে শুল্ক বা অন্যান্য নীতির মাধ্যমে তাদের বাণিজ্য শর্তের উন্নতি করতে পারে না।

বড় দেশগুলো তাদের আমদানি ও রপ্তানির দাম প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু তারা শুল্ক আরোপ করলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে অন্য দেশ ও এরূপ ব্যবস্থা নিতে পারে।

(খ) দেশীয় বাজার ব্যর্থতার যুক্তিঃ

যদি কোন দেশীয় বাজার যথাযথভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে এরূপ ক্ষেত্রে অবাধ বাণিজ্য নীতি ত্যাগ করা অর্থনীতির জন্য সঠিক কল্যাণকর হতে পারে।

যেমনঃ মনে করি, দেশের শ্রমবাজার যথাযথভাবে কাজ করে না ( বেকারত্ব থাকতে পারে ) এরূপ অবস্থায় সরকার শ্রম বাজারের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যের সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করতে পারে।

তবে বাজার ব্যর্থতা সমস্যা নিরসনের জন্য বাণিজ্য নীতি ব্যবহার না করে বিশেষ বাজারের জন্য নির্দিষ্ট নীতি ব্যবহার করা শ্রেয়। যেমনঃ শ্রম বাজারে নিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আর্থিক বা রাজস্ব নীতি নেওয়া যায়।

(গ) অনুন্নত দেশসমূহের ক্ষেত্রে যুক্তিঃ

অবাধ বাণিজ্য অনুন্নত দেশের শিল্পায়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে।

কারণ এসব দেশের নতুন শিল্প উন্নত দেশের প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং প্রতিষ্ঠিত শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না।

এজন্য শিশু শিল্পকে সংরক্ষণ করা উচিত।

অনেকের মতে বর্তমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অন্যায্য এবং উন্নত বিশ্বের সম্পদের কারণে অনুন্নত বিশ্বে দারিদ্র বিদ্যমান।

ওসব উন্নয়নে কুফল থেকে রক্ষা করার জন্য অনুন্নত দেশসমূহের অবাধ বাণিজ্য নীতি ত্যাগ করা প্রয়োজন।

সারসংক্ষেপঃ

১. যদি বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যের অবাধ প্রবাহে সরকার কোন রূপ বাধা নিষেধ আরোপ না করে তাহলে এরূপ অবস্থাকে অবাধ বাণিজ্য বলে।

২. অবাধ বাণিজ্য বিশেষায়নের সুযোগ দেয়, দক্ষতা ক্ষতি এড়ায়, উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান মাত্রা গত প্রতিদানের সুফল সৃষ্টি করে এবং স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর দাবি এড়ায় ।

৩. অবাধ বাণিজ্যের বাণিজ্য শর্তের উন্নতি অর্জন , দেশীয় কোন বাজার ব্যর্থতার প্রতিকার এবং অনুন্নত দেশসমূহের শিল্পায়ন – এর পথে বাধা স্বরূপ।

আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

আমার লেখার মাঝে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে সংশোধনের পরামর্শ দিন।

আর পোস্টটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ সবাইকে

About Author

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *